"জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের ভূমিকা : বিভক্তি নাকি ঐক্য"
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কথাটা প্রথমেই মনে আসে তা হচ্ছে আইএস তথা জঙ্গি ইস্যু। বিষয়টি এতদিন দেশের বাইরের হলেও এখন তা জেঁকে বসেছে আমাদের দেশেও। যার অন্যতম নির্মম দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হোলিআর্টিজেন ও শোলাকিয়া হত্যাকাণ্ড। যেখানে একদল মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেদের প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বড় একটা অংশই বিদেশি।
কারা এর নেপথ্যে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে যে বিষয়টি আমাদের চমকে দেয় তা হচ্ছে এদের সকলেই বাংলাদেশী ও বিদেশী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা অন্যতম কারণ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
এতদিন মনে করা হত(পড়ুন একপেশে দায় চাপিয়ে দেয়া হত।) কেবল একটি ধর্মীয় মতাবলম্বী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত। যদিও সাম্প্রতিক সময়ের কার্যাবলি সমূহ আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে ভাবতে শিখিয়েছে। আর এই ভাবাভাবি, আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের ঝড় এখন দেশ জুড়ে। মোড়ের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে উপরতলার সব ক্ষেত্রেও একই আলোচনা এবং অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ।
এবার আসুন একবার ভেবে দেখি এসবের জন্য দায়ী কারা। যারা অন্যায় করেছে? যারা অন্যায়কে উত্সাহিত করেছে? যারা এসব অন্যায় ঘটনায় হেলাফেলা করছে? নাকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সকলেই?
যারা অন্যায় করেছে, মদদ দিয়েছে তাদের এমন সব কার্যক্রম অবশ্যই ঘৃণিত।
কিন্তু উঠতে বসতে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে দূষে যাচ্ছেন, এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইনিয়ে বিনিয়ে হেয় করছেন তা আদৌ কতটা যৌক্তিক? প্রতিষ্ঠান পরিচালকরা হয়ত কিছু ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারেন না, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা?
অবশ্যই তাঁরা নন। তাঁরা পড়তে এসেছেন, পড়াশোনা শেষে নিজেদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করবেন।
একটি ঝুড়িতে কয়েকটি পঁচা আপেলের জন্য আপনি নিশ্চয়ই পুরো ঝুড়ির আপেল গুলোকে পঁচা বলবেন না। তবে সতর্ক থাকতে হবে পঁচা আপেলের প্রভাব যেন ভালো আপেলগুলোতে না পড়ে।
পঁচা আপেলের জন্য আপনি যেমন পুরো ঝুড়ির সব আপেল ফেলে দিবেন না, তদ্রূপ গুটিকয়েকের জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে পারেন না। যেখানে এমন গর্হিত কাজের বিপক্ষে তাঁদের অবস্থান।
আসুন আমরা বরং সবাই একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীরা মিলে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অমানবিকতা, নির্মমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গ করছেন, ভালো করে দেখুন তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপনারই বন্ধু। আপনার অনেক পরিচিত চেনা মুখই ঐসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। নিতান্তই তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থী। তাঁদের ব্যঙ্গ না করে বরং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমারা রুখে দিই সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
যারা ইসলাম নিয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন না করে নিজেদের মনগড়া বক্তব্য তৈরি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তাঁদের এমন কার্যক্রম কোনওক্রমেই গ্রহণ করা যায় না। এদের ঠেকাতে প্রয়োজন আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং অতি অবশ্যই ইসলাম নিয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন, গবেষণা এবং জ্ঞান অর্জন। ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান ও এর যথাযথ প্রয়োগই পারবে এমন সংকটের উত্তরণ ঘটাতে। আর এর জন্য আমাদের প্রয়োজন সুবিবেচনা বোধ এবং আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের যথোপযুক্ত ব্যবহার।
আসুন আমরা কাউকে হেয় না করে যথোপযুক্ত জ্ঞান অর্জনে নিজেদের নিয়োজিত করি। আমাদের অর্জিত জ্ঞান এবং সকলের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধের প্রাচীর দিয়ে ঠেকিয়ে দেই সকল অজ্ঞানতা আর অন্ধকার।
হেরায় পতিত আলোয় আলোকিত হোক ভুবন।
0 comments:
Thank you