নিজেকে বদলে দেখান, বদলে যাবে সমাজ
একটা জরিপ করে দেখলাম মানুষের স্বভাবের ২০ ভাগ আসে জন্মগতভাবে। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। আর ১০ ভাগ পরিচালিত হয় তার বিবেকের দ্বারা। বাকী ৭০ ভাগই পায় পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। (সার্ভে টা একুরেট নাও হতে পারে। যেহেতু জরিপ টা আমি ইন্টারনেট বেইসড ইনফো নিয়ে করেছি। তবে খুব বেশি উনিশ-বিশ হওয়ার কথা নয়।)
.
যায় হোক, আশেপাশের পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া স্বভাবগুলোই মানুষের মধ্যে সবথেকে বেশী রুপ পায়। যেমন ধরুন, আপনার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা সহজ ভাষায় আমেরিকায়। তাহলে আপনি ১৭ বছর বয়সেও ভার্জিন থাকাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু বলে বিবেচিত হবে। কিন্ত যদি আপনি বাংলাদেশী হন, তাহলে পাবলিক প্লেসে আপনার বিবাহিতা স্ত্রীর হাত ধরতে পারা মানে বুঝতে হবে আপনার বুকের পাটা আছে মশাই। তেমনি সৌদি আরবে একটা গরিব ঘরে জন্ম নেয়া বালক চুরি করার কথা খুব সহজে ভাববে না, যদি না সে ভিন্নদেশীয় শিক্ষা বা পরিবেশ পায়। কিন্ত আফ্রিকার যুবকের কাছে তা অপরাধ বলেই গণ্য হবে না।
.
আমার সার্ভের রেজাল্ট টা আরেকবার খেয়াল করুন। ২০ ভাগ নিজস্ব স্বভাব বাদ দিলে, ৭০ ভাগ পারিপার্শ্বিক থেকে আর ১০ ভাগ বিবেকের দ্বারা। সুতরাং আপনার পারিপার্শ্বিকতা আপনাকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবিত করলেও কিছু কিছু মানুষ ক্ষেত্র বিশেষে নিজের বিবেকের কথা মেনে চলায়, তারা আলাদা হয়। এই যেমন আমরা বাঙালীরা আরামপ্রিয়, কিন্ত চাহিদা/অভাবের তাড়নায় আমরা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী পরিশ্রম করতে বাধ্য হই।
(এটাকে শুধু আর্থিক দিক থেকে চিন্তা করবেন না, আপনার সামগ্রিক কাজের সাথে মেলান।) কিন্ত কিছু বাঙালীকে দেখবেন পরিশ্রম করাকে বড্ড ভালোবাসে। স্বভাবসুলভ পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত চীনা/ জাপানীদদের চেয়েও তিনি অধিক পরিশ্রমপ্রেমী। আমাদের দেশে দুর্নীতি আহামরি কোনো ব্যাপার হয়। খোদ দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ও দুর্নীতিতে সয়লাব। কিন্ত এ দূর্নীতিটা আসে কিভাবে? প্রথমে আসা যাক আমাদের মেরুদণ্ড থেকে। অর্থাৎ শিক্ষা, যেখানে আমরা নীতিজ্ঞান, জীবনে চলার দিক নির্দেশনা সহ সকল কিছুর হাতেখড়ি পায়। সেই শিক্ষা দেয়ার কারিগর, নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে আপনাকে চরম লেভেলের মেধার পরিচয় দিতে হবে। একটু হেরফের হয়েছে তো, চান্স নেই। কিন্ত আপনার বাবার বন্ধু যখন মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় কিংবা আপনার বাবার টাকায় ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পকেট ভর্তি করার মুরোদ আছে, তখন আপনার মেধার পরিচয় না দিলেও চলবে। ভালো ডিগ্রী নেওয়ার পর প্রথম কাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া, আর তার জন্য প্রথম পদক্ষেপ চাকরী। নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যান্ড করেও ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে স্বভাবতই আপনার চপ্পল ছিড়বে, কিন্ত ফলাফল শুণ্য। কিন্ত আপনার মামা-চাচা (ক্ষমতা) থাকলে আর অতো
ঝক্কি পোহাতে। তাহলে এই মামা-চাচার ভিড়ে আপনি সাধারণ ব্যাক্তি কি করবেন? ঠিকই ধরেছেন। ঘুষ দিবেন। এভাবে ধাপে ধাপে উপরে যেতে হলেও দুর্নীতি বেটা আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। কিন্ত আপনি যে আপনার মধ্যবিত্ত বাবার কষ্টের জায়গা জমি বিক্রি এতোগুলো দুর্নীতির বিল চুকিয়েছেন তার কি হবে? একটাই উপায়, আপনিও শুরু করুন। তুলতে হবে তো বাবার কষ্টার্জিত টাকার শোধ।
.
ঠিক এভাবেই পরিবেশগত ভালো দিকগুলোর পাশাপাশি খারাপ দিকগুলো ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ইউটিউবার 'শামীম হাসান সরকার' ভাইয়ের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে 'পরিবর্তন চাই' গ্রুপের সাথে মিলে একটি 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ' ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছিলাম এক বন্ধুসহ। দিনভর অনেক ময়লা পরিষ্কার করেছি দলবল নিয়ে, গণসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। কিন্ত পরদিন আমার সেই বন্ধু
আইসক্রিম খেয়ে মলাট টা ফেললো ফুটপাতে। ঠিক এইভাবেই আমরা আমাদের পরিবেশগত স্বভাবের দ্বারা বেশী প্রভাবিত হচ্ছি, কিন্ত তা কি ঠিক না ভুল তা আর বিবেক দিয়ে চিন্তা করছি না। ফলাফল একটু আশা জাগিয়ে যেই লাউ সেই কদুই থেকে গেছে।
.
আজ ব্যাংকে এক কিশোর লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে এক পিচ্চি। লাইন যখন নিকটে আসলো তখন ব্যাংকার সেই কিশোরের চেক চাইলো। কারণ একে তো পিচ্চিকে দেখা যাচ্ছে না, তারউপর পিচ্চি ছেলেই কিইবা বুঝবে। কিন্ত সেই কিশোরটা বললো আমার আগে এই ছেলে আছে।
আশেপাশের কিভাবে আগে যাওয়া যায় ভাবতে লোকগুলো অবাক হয়ে বা লজ্জা পেয়ে খুব সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে গেলো। লাইনের প্রতি সচেতন হয়ে গেলো। সেই কিশোর টা ছিলাম আমি। খুব বড় কাজ করিনি, সেই ক্ষমতা বা যোগ্যতাও আমার নেই। আমার পরিবারের একটা ছোট্ট
শিক্ষাকে বিবেক আর মস্তিষ্ক দিয়ে কাজে লাগিয়েছি। তবে এই একটা ছোট কাজ করে ৫/৬ জন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পেরেছি।
.
সবকিছু রাতারাতি হয়না। ছোট ছোট সুচনাগুলোই বৃহৎকিছুতে রুপ নেয়। পরিবর্তন জাদুর পরশ নয় যে একদিনে হয়ে যাবে। আপনি শুধু নিজের মস্তিষ্ক আর বিবেককে অল্প অল্প ব্যাবহার করা শুরু করুন, দেখবেন বড় কিছু একদিন হবেই হবে।
.
.
-রায়হান আমিন চৌধুরী
২য় সেমিস্টার, শরীয়াহ বিভাগ।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
0 comments:
Thank you