একটি বাসের আত্মকাহিনী
আমি।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টমেট্রো ০৭৮ নম্বর বাস। আছ লিখছি আমার কিছু আত্মকথা। মানুষের মত ত আমার কোন মুখ নেই,তাই নিজের মনের কথা গুলো আপনাদের জানাতে আমি আজ কলম হাতে নিয়েছি।
.
যতটুকু মনে আছে, ২০১৩সালের জানুয়ারী মাসে একটা মোটর গ্যারেজে আমার জন্ম। আমার সাথে জন্ম নেয় আমার আরো সহোদর ৫ জন বাস। আমাদের সবার গায়ে দেয়া হয় হালকা সবুজ রং। লাগানো হয় ভার্সিটির নাম ও লগো। নতুন সাজে আমরা হাজির হই কুমিরায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমার সুবিশাল পেটে ঢুকে প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্র ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া শুরু করে। ক্লাস শেষে আমার পেটের ভিতর একটা সিট পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে ছাত্ররা।খুব গর্ব বোধ করি এ সময়। কেউ ব্যাগ,কেউ খাতা এমন কি কাউকে কাউকে পৃষ্টা দিয়েও সিট ধরতে দেখেছি। নিজের সিটের পাশাপাশি এরা বন্ধুদের জন্যও সিট ধরে, একেকজন ৫-১০ টা সিট ধরে। যার কারণে অন্যরা আর সিট পায় না।তখন সিট বঞ্চিত ওই অভাগা ছাত্রদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। তাই যারা এমন কাজ কর তাদের বলছি,বন্ধুর জন্য ভালবাসা থাকা অবশ্যই ভাল।সিট ধর।তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত না।
.
মাঝে মধ্যে সিট না পেয়ে হতভাগা ছাত্ররা আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে। কারণ আমাদের ছাড়া ওরা এতটা পথ দাঁড়িয়ে আসবেই বা কেমনে।
.
মাঝে মধ্যে ফিমেল একাডেমিক বিল্ডিং এর ছাত্রীরাও আমার পেটে করে আসা যাওয়া করত। তবে এখন দেখি নিয়মিতই আমার পেটে করে আসা যাওয়া করে। শুনলাম ওদেরও নাকি এখন কুমিরায় নিয়ে আসছে। আমাদের কাজও তাই এখন বেড়ে গেল। আমাদের কে সাহায্য করার জন্য লাল রং এর উঁচু উঁচু কিছু বাসও নিয়ে এসেছে আমাদের মালিক অথরিটি । ওদের দেখে আমার হিংসা হয়। এত উঁচু কেন ওরা। শুনলাম ওরা নাকি সরকারী লোক। তাই এত বড়। কিন্তু ওদের গতি আমার চেয়েও কম। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে আমি ওদের আগেই ছুটি। কারণ এ রোডে আমিই বস।
.
এত কষ্ট করি প্রতিদিন, অথচ মাঝে মধ্যে ছাত্র ছাত্রীরাই আমার পেটের ভিতর বসে আমার গায়ে মার্কার দিয়ে আঁকা আঁকি করে। আমার সৌন্দর্য হরণ করে। আমার তখন খুব খারাপ লাগে। তবে ওরা ভুলেও কখনো আমার গ্লাস ভাঙ্গে না। এর কারণ আসলে ওদের ভদ্রতা ও নম্রতা। আসলেই ওরা খুব ভাল। তাই ওদের জন্য এ কয়েকবছর মায়া জন্মে যাওয়ার আর যেতে পারছিনা।শুনলাম তোমরা ছাত্ররা নাকি আমার পেটে অন্যের হারিয়ে যাওয়া কিছু পেলে ছবি তুলে ফেইসবুকে দাও। আমার ত ফেইসবুক নাই।তবে অইদিন দুইটা মেয়ে নিজেদের মধ্যে এগুলো নিয়ে কথা বলছিল,তখন শুনলাম ওদের মুখে। মাঝে মধ্যে ছাত্ররা আমাকে মুড়ির টিন নামে ডাকে। আমারও ভাল লাগে এমন সব নাম শুনতে। মাঝে মধ্যে হাইওয়েতে চলার পথে আমার গায়ে অন্য কোন বেয়াদব বাস আঘাত করলে ওরা সাথে সাথে সে বাসকে সায়েস্তা করে। আমাকে কতটা ভালবাসে ওরা, তখন বেশি অনুভব করি।
.
দিনশেষে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে ফিমেল একাডেমিক বিল্ডিং এর পাশে আমাকে বিশ্রাম করতে দেয়া হয়। হে আই আই ইউ সিয়ান রা, আমি তোমাদের সেবা করতে পেরে আসলেই ধন্য। তোমাদের কাছ থেকে শুধু ভালবাসা আর যত্ন আশা করি।একদিন তোমরা দেশে বিদেশে তোমাদের ভার্সিটির নাম উজ্জ্বল করবে। তখন আমার ভাল লাগবে। কারণ তোমাদের এ সাফল্যের পিছনে আমার মত একটা ক্ষুদ্র বাসের অবদানও কম নয়। হয়ত তোমরা আমার কথা ভুলে যাবে, কিন্তু আমার মনে থাকবে তোমাদের কথা।
.
ইতি
০০৭৮ নম্বর বাস
আই আই ইউ সি।
awesome.....
ReplyDeleteNice Story
ReplyDelete