বিশ্ব ফার্মাসি দিবস এবং ফার্মাসির যত কথা
যে ছেলেটির মেডিকেল পড়ার প্রবল ইচ্ছে থাকে কিন্তু চান্স পেল না পাবলিক মেডিকেলে, মূলত তারাই বেছে নেয় ফার্মেসি। যোগ্যতার দিক থেকে ডাক্তারদের থেকে যে একজন ফার্মাসিস্ট খুব বেশী পিছিয়ে তা কিন্তু নয়। উন্নত বিশ্বের দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে ডাক্তার কখনই ফার্মাসিস্টের অনুমোদন ছাড়া প্রেসক্রাইব করতে পারেন না।
.
“Study in pharmacy and fly to America’’ এমনি স্লোগান নিয়ে ফার্মেসী স্নাতক শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে দেশের ৪৬টা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হচ্ছে ফার্মেসি স্নাতক ডিগ্রি। বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প স্বয়ং সম্পূর্ণ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৩৩০ এর অধিক ফারমাসিউটিক্যালস কোম্পানি। এখানেই শেষ নয়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৪৬টি দেশে। মান যাচাই করে বিদেশে সুনাম অর্জন করে সাফল্য দেখিয়েছে ঔষধ শিল্প। স্বীকৃতি দিয়েছে USFDA, UNICEF, MHRA, AGDHA সহ নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়তই হচ্ছে ব্যাপক রাজস্ব আয়। এইত সেদিন, BEXIMCO PHARMACEUTICALS LTD তার ঔষধ রপ্তানি করল যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের ঔষধ বাজার উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনার।
.
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ১০বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রপ্তানিকারকের স্থান দখল করবে ঔষধ শিল্প। ঔষধ শিল্পের এই বিকাশের পিছনে যাদের অবদান তাঁরাই ফার্মাসিস্ট। আজও মানুষ মনে করে ফার্মেসী পড়া মানে ঔষধ বিক্রেতা।
.
এক আংকেল আমায় বলল -বাবা! তুমি কিসে পড়?
= জ্বি আংকেল, ফার্মেসি।
তিনি খুশি হয়ে বললেন, - হাফিজ জুট মিলের সামনে একটা দোকান দিতে পারবে! ভাল বিক্রি হবে।
= না আংকেল, তা নয়। এটা ঔষধ উৎপাদন করা, ফার্মাসিউটিক্যালে মনোনিবেশ করা।
তিনি আরও খুশী হয়ে বললেন, - তাহলে তো ভালই, তুমি চাকুরীও করবে, আবার কোম্পানির গেটের সামনে একটা দোকানও দিতে পারবে।
অর্থাৎ তাঁর মানসিকতা সেই দোকানেই পড়ে আছে।
.
শিক্ষিত সমাজ থেকে শুরু করে বাংলার অধিকাংশ মানুষের স্বচ্ছতা জ্ঞান নেই ফার্মেসি নিয়ে। ফার্মাসিস্ট ছাড়া যে একজন ডাক্তার প্রতিবন্ধী তা ডাক্তারও জানে। কিন্তু সমাজে ডাক্তারদেরই সম্মান বেশী, ফার্মাসিস্টদের নেই। আড়ালে কাজ করা এই ফার্মাসিস্ট কখনো ক্লান্ত হয় না। প্রকাশের জন্য কমিয়ে দেয় না ঔষধের মান। ব্যাঘাত করে না রাজস্ব আয়ে।
.
ফার্মাসিস্টদের অধিকার আদায়ে ২০০৯ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত International Pharmacists Congres এ TURKISH PHARMACISTS ASSOCIATION প্রস্তাব করে ২৫সেপ্টেম্বর WORLD PHARMACISTS DAY পালন করার জন্য। এই প্রস্তাব বিশ্বে সামগ্রিকভাবে গৃহীত হয় এবং সেই থেকে ২৫সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে WORLD PHARMACISTS DAY পূর্ণ মর্যাদার সাথে পালন করা শুরু হয়। এবারে প্রতিপাদ্য স্লোগানঃ "Pharmacists caring for you" অর্থাৎ "ফার্মাসিস্ট আপনাকে সেবা দিচ্ছে" ঔষধ তৈরি, ঔষধ নিয়ে গবেষণা, ঔষধ নিয়ে বিস্তর জ্ঞান কেবলমাত্র একজন ফার্মাসিস্টই রাখে। ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে রুগীকে পুরোপুরি সেবা দিতে একজন ফার্মাসিস্ট, রোগীকে সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় ঔষধ দিয়ে সহায়তা করার দিক দিয়ে অবস্থানগত একজন সর্বোত্তম ব্যক্তি।
.
তাই এবারের ফার্মাসিস্ট দিবসে আমাদের দাবিঃ - হসপিটাল ফার্মাসিস্ট চালু করা। -দ্রুত মডেল ফার্মেসি/ কমিউনিটি ফার্মেসি চালু করা। -শুধু 'এ গ্রেড সার্টিফিকেট' নয়, যথাযথ কর্মসংস্থান তৈরি করা। মনে রাখবেন, A doctor can save a patient but a pharmacist can save a nation.
লেখাঃআয়মান,শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, আই আই ইউ সি।
0 comments:
Thank you