আমরা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নতে হয় আমাদের বসবাস। স্বপ্ন ভাঙ্গে, স্বপ্ন গড়ে।দিন শেষে রাত আসে। রাতের অন্ধকার স্তব্ধ করে দেয় আমাদের স্বাভাবিক জীবন। মানুষ মৃত্যু এবং শোকের যন্ত্রণা কাটিয়ে পুনরায় স্বপ্ন দেখে, আশায় বুক বাধে। নতুন বিশ্বাস এবং নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে জীবন শুরু করে। রাত গভীর হয় আবার ভোরের আলোয় সকাল হয়। সূর্য উঠে, আর সেই সূর্য দেখে আমরা মানুষগণ পুনরায় নতুন করে স্বপ্ন বুনি। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের স্বপ্নময় জীবন। আর এই স্বপ্ন ভাঙ্গা এবং গড়ার মাঝে ঝুলে আছে ‘‘স্বচেষ্ট স্বপ্ন পূরণ”। আমরা স্বপ্ন প্রায় সবাই দেখি। সকাল হতে রাত অবধি পরিশ্রম শেষে রাস্তার পার্শ্বে অর্ধ-আবৃত ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকা ঐ মানুষটিও দেখে সোনার খাটে ঘুমানোর স্বপ্ন। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষিত যুবসমাজ দেখে সেরাদের সেরা হওয়ার স্বপ্ন। তারা আশায় থাকে হাজার মানুষের হাতের তালি পাওয়ার। কিন্তু তারা কি জানে সফলতা কত কষ্টের?
.
বাসায়বসে টিভিতে অন্যের খেলা দেখে তালি দেয়া খুব সহজ। কিন্তু আমাদের জন্য হাতের তালি কে দিবে?আমি কী এমন করছি যার জন্য মানুষ আমাকে স্বাগত জানাবে? কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছয় জনের একটি গ্রুপে একটি প্রশ্ন করেছিলাম, যদি তোমাদের একটা জাদুর প্রদীপ দেয়া হয় এবং তোমাদের প্রত্যেককে তিনিট চাওয়া(আশা) পূরণের সুযোগ দেয়া হয় তবে তোমরা কি চাওয়া পূরণ করতে চাইবে। এক্ষেত্রে অধিকাংশই একটা সাধারণ মনোবাসনা প্রকাশ করল- 'আমরা একজন ভালো মেয়ে সঙ্গী চাই'।
.
গতিময় এই পৃথিবীতে মানুষ তার অবস্থান থেকে স্বপ্ন বা প্রত্যাশার ভিন্ন রূপ দেয় যথাপি এই স্বপ্ন আবদ্ধ থাকে বাস্তবতার বেড়াজালে। বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সাইকোলজিষ্ট সাইমুন্ড প্রিউড, যাকে ফাদার অফ সাইকোলজিষ্টবলা হয়,তিনি এই স্বপ্ন নিয়ে অনেক তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি স্বপ্নকে বাস্তবতা এবং প্রত্যাশার পার্থক্য বলে দাবি করেছেন। অর্থাৎ স্বপ্ন = প্রত্যাশা - বাস্তবতা। সে যাই হোক, স্বপ্নকে বাস্তবতারসাথে মিল রেখেই, বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেএগিয়ে যেতে হবে। সম্ভাবনাময় স্বপ্নকে অসম্ভব বলে ঘরে বসে থাকলে কিছুই হবে না। জীবন থেকে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা দূর করে ইতিবাচককে আপন করে নিতে হবে। নেতিবাচক কথা মানুষকে পিছিয়ে দেয়,যেমন অসম্ভব, আমাকে দিয়ে হবে না, এখনও অনেক সময়, দেখিনা কি হয় ইত্যাদি। এক্ষেত্রে নেপোলিয়ান বোনাপার্টেরবিখ্যাত উক্তি হচ্ছে- ‘‘আমার শব্দকোষে অসম্ভব বলে কোনে শব্দ নেই”। পাখিততক্ষণ উড়ে বেড়ায়, যতক্ষণ সে ডানা নাড়ায়। ডানা থামিয়ে দিলে মর্ত্যভেূপাতিত হয়। স্বপ্ন ভাঙ্গবে। আবার সেই স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
.
আশা না হারিয়ে বরং আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করুন। আমরা কেউই জানিনা রাতের অন্ধকার শেষে সকালের আলো আমাদের তরে কি বয়ে আনবে। প্রতিটি সকাল আমাদের দু’টো সুযোগ দেয়। একটি আরামে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার। আর অন্যটি জেগে উঠে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার। সুযোগ বেছে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের হাতেই। তাই পরিকল্পনা আর আশা নিয়ে প্রতিনিয়ত পড়ে না থেকে নেমে পড়–ন আপনার লক্ষ অর্জনে। শুরু করুন আজ থেকে। স্বপ্নময়ী দৃঢ় পরিশ্রমীর জন্যই সফলতা।
.
নেপোলিয়ান ২৫ বছর বয়সে ইতালীতে জয়ের পতাকা তুলেছিলেন। শচীন টেন্ডুলকার মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ক্রিকেট স্টার হয়েছিলেন। এদের সফলতা এমনি এমনি চলে আসেনি। সাকিব আল হাসান মাত্র ২৪ বছর বয়সে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার হয়েছিলেন। তারা স্বপ্ন দেখেছিল এবং বাস্তবতার সাথে মিল রেখে চেষ্টা করেছিল, তাই তাঁরা সফলকাম। স্বপ্ন দেখুন, নেমে পড়ুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই। কঠিন কাজকে সহজ এবং নিজের মত করে আপনার সফলতা অর্জন করতে হবে। ঘটনা চক্রে সফলতা দূরে থাকে। আর চক্রকে উল্টানোর দায়িত্ব আপনার। আসুন সহজ-সরল ভাষায় কিছু কৌশল গ্রহণ করি
.
• আপানর পাশ্বে সর্বদা একটা নোট বুক রাখুন, আপনার স্বপ্ন বা প্রত্যাশাটি লিখে রাখুন।
• যা করতে চান তা স্পষ্ট এবং সৃজনশীলভাবে চিন্তা করুন।
• সময়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন।
• কাজের গঠনমূলক পরিকল্পনা করুন, অতিরিক্ত কাজ করার প্রয়োজন নেই, কারণ বিশ্রাম আপনার কর্মদক্ষতাকে বৃদ্ধি করবে।
• সর্বোপরি আপনার স্বপ্নটি বা কাজ সম্পর্কে কারো সাথে শেয়ার না করে, নিজ মনে কাজ চালিয়ে যান (নয়তো অন্যের দ্বারা আপনি নিরৎসাহী হবেন)।
.
আশাবাদী মানুষ নিজের ছোট ছোট ক্ষমতাগুলোকে এক করে ব্যবহারযোগ্য পথ তৈরী করে, জীবনে ছোট ছোট অর্জনে আশা পরিণত হয় বিশ্বাসে। আশাবাদী মানুষ দশগুন উৎসাহের সাথে নিজের কাজ করে থাকে। তারা বিশ্বাস করে তারা জীবনে সফল হবেই। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আশাবাদী মানুষ। তিনি বহুবার বিরোধীদের হারিয়েছেন। জাপানের মানুষ প্রতিদিন ১০০০ বার ভূমিকম্পের সাথে মোলাকাত করেন। তারপরও তারা বেঁচে আছে আশার দৃঢ়তা নিয়ে। তাই, আপনাকে সফলতার যাত্রায় হাঁটতে হবে। স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্ন আঁকুন, স্বপ্নতে বাস করুন, বাস্তবায়নের আশায় আলোক পথে নেমে পড়ুন। প্রেরণা দেয়ার কেউ থাকবেনা, বাধা আসবেই। ভয় নেই, আজকের সকালটা একান্তই আপনার, আজকের ২৪টা ঘন্টা একান্তই আপনার। গুণে গুণে প্রতিটা সময় উপোভোগ করুন সফলতা কিংবা বিফলতার রাজ-রাজ্যে।
.
নূর হোসেন ইমরান।
প্রাক্তন ছাত্র।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
0 comments:
Thank you