COMBINED QUALITY WITH MORALITY
"প্রকৃতি যেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকে" সমূদ্রপাড়ের মানুষের পীপাসা নাকি নদীর জলে মিটে না কথাটি যেমন সত্য তেমনি সত্য বনাঞ্চলের মানুষের মন ইট- পাথরে আঁটকে রাখা যায় না। ব্যতিক্রম ঘটেনি আমার বেলায়ও। এস.এস.সি. পরীক্ষা শেষ করেই পড়েছিলাম বিপদে, আমাকে জোড়পূর্বক ঢাকার বাসিন্দা বানানো হল শুধুমাত্র বড়বোন আর ছোটমামার নির্দেশে। আমার বাবা-মা যদিও চাচ্ছিলেন তাদের একমাত্র ছেলে আর যাই করুক অন্তত ঘরের পাশের জীর্ণশীর্ণ কলেজটিতে পড়বে কিন্তু বাস্তবতার কাছে হেরে তারাও ক্ষণিকের আবেগকে বিদায় জানিয়ে আমাকে উঁঠিয়ে দিলেন মামার হাতে।
অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ফটিক গল্পের ফটিকের মতো আমার অবস্থা হয়েছিল। রেজাল্টের সুবাদে আর মামার নির্দেশে ভর্তি হলাম ঢাকা কমার্স কলেজে। কলেজটি যদিও আকাশচুম্বী উচ্চতায় কিন্তু খোলা- মেলা প্রাকৃতিক পরিবেশসম্মত জায়গায় একেবারেই সংকটে। এটাই আধুনিক ঢাকার চিরাচরিত রূপ। কি যে এক কলেজ যেন জেলখানায় পুরে দিয়েই মামা লাপাত্তা। অনেকেই ঠাট্টা করে বলেন ডিসিসি মানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা কমার্স কলেজ না। থাকতাম হলে, মাসে একবার সম্ভব হলে মামার সাথে দেখা করতে যেতাম আর অনুযোগ করে বলতাম -"মামা আমাকে জেলে ঢুকালেন কেন?" মামা শুধু এইটুকুই বলতেন -"অপেক্ষা করতে থাক, তোর ভালোর জন্যেই এখানে এনেছি।" আমি বুঝি সে কি বলতে চাইত, তা আমি পেয়েছি নিশ্চয়ই কিন্তু যা হারিয়েছি তা পূরণের নয়।
আমি হারিয়েছি আমার মানবতা, নৈতীকতা, ধর্মনুরাগীতা আর হারিয়েছি ভালবাসা। কবে যে মুক্তি মিলবে সেই প্রতীক্ষার প্রহরই কেবল গুনতে থাকতাম। এইচ. এস. সি. পরীক্ষা সন্নিকটে আর সবাই যে যার মত ভেবে- চিন্তে পছন্দের ভার্সিটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে গেল কিন্তু আমি হয়নি। আমার এ বিপরীতমুখী আচরণে আমার পরিবারকে আমি এইটুকুই বলেছিলাম -আমার সরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই, সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ফল- সেমিষ্টারেই কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব এবং আমি আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগং ক্যাম্পাসেই ভর্তি হব। বিশ্বাস করেন সরকারি ভার্সিটির আশা ছেড়ে কঠিন এই সিদ্ধান্তটি নিতে আমি অনেক দূর ভেবেছিলাম। আমি কিছুই চাইনি, শুধু চেয়েছিলাম আমার হারানো মানবতা, নৈতিকতা, ধর্মানুরাগীতা আর আমার ভালবাসা ফিরে পেতে। আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের নামি- দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর যা কিছুই দিক কিন্তু মানবীয় এই শিক্ষাগুলো তাদের জীবদ্দশাতেও দিতে পারবে না। হয়ত আমি আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করতে নাও পারি, সেটা নিতান্তই আমার ব্যর্থতা কিন্তু বহু জীবন পাল্টে গেছে, বহু অচেনা মুখ আজ আইডল হয়ে গেছে কেবল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন থেকেই। পাহাড়ঘেরা ফুলেল ক্যাম্পাস আর পাশেই।সমূদ্রতীর এ যেন একটি স্বর্গীয় ক্যাম্পাস যা অনেক মানুষই আশা করে হয়ত কারো আশা সফল হয়, হয়ত বা কারো নয়। সকালের ঘুম ভাঙে মোয়াজ্জীনের সুরেলা আযানে, দিনটি কেঁটে যায় পাহাড়ের সুশীতল ছায়াতলে আর রাতের ঘুম নেমে পড়ে সমূদ্রের হাতছানিতে। এমন ক্যাম্পাস বাংলাদেশে দ্বিতীয় আরেকটি আছে কিনা সন্দেহ।
এখানকার প্রতিটি মানুষই যেন একেকজন স্বর্গীয় প্রতিনিধি আর তারা এই বার্তাই পৌঁছে দেয় -"আসুন, আপনার হৃদয়ের চাবিকাঠিকে পরিবর্তন করুন, কেবল গতানুগতিক শিক্ষাই নয়, পরকালের জন্যও কিছু নিয়ে যান।" এটিই বাংলাদেশের একমাত্র পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস যেখানে আপনি দেখতে পাবেন সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানান রংয়ের নানান বর্ণের নানান ঢংয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের সমাবেশ। পারবেন নিজের বিশ্বভ্রাতৃত্বকে প্রলম্বিত
করতে, পারবেন নিজের নৈতিক অবস্থানকে সুদূঢ় করতে আর এ কারণেই হয়তবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্লোগান রাখা হয়েছে- "COMBINED QUALITY WITH MORALITY"।
করতে, পারবেন নিজের নৈতিক অবস্থানকে সুদূঢ় করতে আর এ কারণেই হয়তবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্লোগান রাখা হয়েছে- "COMBINED QUALITY WITH MORALITY"।
আমার সেই ছোটমামার প্রতি শত রাগ-অভিমান থাকলেও তাকে একদিন বলেছিলাম -"ঢাকায় গিয়ে অমানুষ হয়েছিলাম সত্য, এবার মানুষ হতে চট্টগ্রামে চলে এসেছি। আপনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ, আমার এতটা নৈতিক অবক্ষয় না হলে আমি হয়ত বুঝতেই পারতাম না কোথায় এর পূর্ণতা পাব; হ্যাঁ আমি পেয়েছি সত্যই তবে জানিনা উপরওয়ালা আমাকে গ্রহণ করবেন কিনা।" ঢাকার বন্ধুরা আবার রাগ করে বসবেন না যেন, ওটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত অভিমত তাছাড়া ঢাকাতেও আমাদের ক্যাম্পাস রয়েছে।।আসলে বন্যেরা বনে যেমনটি সুন্দর ঠিক তেনমটি পাহাড়িরা পাহাড়ে সুন্দর। একজন।পার্বত্য বাঙালি হয়ে আমার মর্মকথার।উপলব্ধি এইটুকুই -"আমি পাহাড়।ছেড়ে থাকতে চাই না, পাহাড় আমার।রক্তে মিশে আছে, মিশে আছে প্রতিটি নিউরনে।"।
প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষীগণ আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই আমাদের এই সমুদ্র ও পাহাড়ঘেরা মনোরম স্বর্গীয় ক্যাম্পাসে। জীবনকে পরিবর্তনে আমাদের অডিটরিয়ামে প্রায়ই।নানান ধর্মীয় ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।করা হয়, অবশ্যই কিন্তু আসবেন। আমাদেরও ভাল লাগবে আপনাদের সাদরে গ্রহণ করতে পেরে অন্তত আমাদের ক্যাম্পাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। আপনারা নিশ্চয়ই বলতে বাধ্য হবেন "ক্যাম্পাসটি কি বাংলাদেশে নাকি সিঙ্গাপুরে!"। অবশ্যই এটি আমাদের মাতৃপ্রতীম বাংলাদেশে।।আপনাদের আগমনের প্রতীক্ষায় আজ এখানেই থেমে যাচ্ছি, ভাল থাকবেন সবাই; আল্লাহ হাফেজ।
শাকিল মাহমুদ খান, শিক্ষার্থী
আইন বিভাগ,আই আই ইউ সি।
আইন বিভাগ,আই আই ইউ সি।
0 comments:
Thank you