হিন্দি ভাষী আত্মভোলা বাংলাদেশী
পৃথিবীতে বাংলাদেশীরাই হচ্ছে একমাত্র জাতি যাদের রয়েছে মাতৃভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবজ্জল ইতিহাস। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৬৪ বছরের মাথায় এসে
বাংলাভাষী দর্শকদের জন্য খোদ বাংলা নাটকই ডাবিং করে
প্রচার করা হচ্ছে হিন্দি ভাষায়।
বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকে টিভি নাটকে যে জোয়ার তৈরি করেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত। এমনকী আশির দশক উত্তর
প্রজন্মও তার সৃষ্টিকর্মের একনিষ্ঠ ভক্ত। এমনই সব
নাটকের মধ্যে অন্যতম উল্ল্যেখযোগ্য নাটক 'আজ রবিবার'।
বহুদিন পর আবারও আলোচনার টেবিলে 'আজ রবিবার'। সম্প্রতি ভারতের বহুল প্রচারিত টিভি চ্যানেল স্টার প্লাস কিনে নেয় নাটকের হিন্দি
সংস্করণের স্বত্ব। বাংলা নাটক এবার দেখবে অন্য
ভাষাভিত্তিক মানুষেরা। কিন্তু বাংলায় তৈরি এই নাটকটি অন্য ভাষার দর্শক নয়, দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশীদেরই।
বাংলাদেশী দর্শকরা তাদের ভাষার নাটক কেন দেখবে অন্য ভাষায়! এ ভাবনা জাগলেও বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। বর্তমানে সিংহভাগ বাংলাদেশীই মজে
আছেন হিন্দি ভাষায় প্রচারিত চ্যানেল গুলোতে। যত বাজে
অনুষ্ঠানই হোক না কেন তাদের মূল উদ্দেশ্য হিন্দিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানই দেখবেন আর কষে গাল দিবেন দেশী পরিচালকদের। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা পরিচালক আর টিভির দৌরাত্মে
মানসম্মত অনুষ্ঠানের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। কিন্তু
তাঁরা দেশি ভালো অনুষ্ঠানের কদর করছেন কতটা!
আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো। তারা বুঝে গেছে আত্মপরিচয় ভুলতে বসা বাংলাদেশীদের যত অখাদ্যই হোক তা কেবল
হিন্দিতে প্রচার করলেই হলো, কিংবা ভারতীয় ট্যাগ থাকলেই হলো, তারা ঠিকই ভারতীয় চ্যানেলের নিকট নিজেদের স্বতন্ত্র স্বত্বা বিকিয়ে দিবেন।
ভারতীয়দের নিকট বারবার মার খেয়ে যাবে, গুলি খেয়ে কাঁটাতারে ঝুলে থাকবে, কষে দুটো গাল দিবে কিন্তু রাতের বেলায় গিন্নির সাথে বসে ঠিকই
ভারতীয় চ্যানেলে মুখ বুজে থাকবেন। এভাবে নিজের শেকড় ভুলে কতটা এগিয়ে যাবেন। আত্মপরিচয়হীন হয়ে
হয়ত কিছুটা আধুনিক সাজা যায় কিন্তু উন্নতি করা যায়
না। যেটুকু হয় তা কেবল তাসের ঘর, ভাঙতে কখনও সময়
লাগে না। আত্মপরিচয়হীন মানুষ যেন জন্মপরিচয়হীনদেরই মতো, যাদের অবস্থান হয় আস্তাকুঁড়ে।
আমাদের দেশের নাটক-চলচ্চিত্র ভিন্ন অনেক ভাষায় প্রচার হবে। আমাদের সম্পর্কে মানুষ জানবে তা আমরাও চাই। কিন্তু নিজেদের নাটক নিজেদের
ভাষায় না দেখে অন্য ভাষায় দেশে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ
অন্যদের দিয়ে দেব। এ কেমন বাতুলতা!
বাংলাদেশের এমন আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়াদের কথা অনুধাবন করতে পেরেই ১৭শতকের কবি শেখ আবদুল হাকিম রচনা করে গিয়েছেন, "যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।"
0 comments:
Thank you